আমার কথা

একটি কথা না বললেই নয়। আমার বন্ধুরা আপনারা দেখে থাকবেন হয়তো আমার সব ব্লগ এবং ওয়েবগুলোতে জাতির জনক বংগবন্ধু এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিষয়াদিই সবচে' গুরুত্ব পেয়ে থাকে। আমি সব সময় তাদের কথাই বলি কারন এর ছাড়া আমার নিজের কোন কথা বলার নেই। কারন আমার তো কোন অবদান জাতির জন্য, দেশের জন্য সর্বোপরি দেশের মানুষের জন্য নেই বা ছিলোওনা। কাজেই ঘুরে ফিরে আমার এই ১৬০ টি ব্লগ এবং ওয়েব সাইটে জাতিরজনক এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার কথাই বলার চেষ্টা করেছি। আমার এই প্রবাসের এতোগুলো বছরে গড়ে তোলা সেই যে যেদিন থেকে ইন্টারনেট চালু হল সেদিন থেকে অদ্যাবধি এই যে অবিরাম কম্পিউটারে বসে বসে দিন নেই রাত নেই যে ছবিগুলো দেখতে অসুন্দর, সেটিকে সুন্দর করার ব্যর্থ প্রয়াস।অনেকগুলো আবার অনেক সময় কি জানি প্রফেশনাল ডিজাইনারদের কাজের চেয়েও অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। যা' আমার সব ব্লগগুলোতে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। কোন নেতা আমার প্রশংসা করলো বা কোন নেতা আমার সাইটতুলো দেখলো বা না দেখলো তাঁর জন্যে আমি এতোটুকু পিপাসিত নই, কষ্ট লাগবে যদি আমার অক্ষমতার কারনে এ গুলো ক্রমানয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়।সেই যে মুক্তিযদ্ধ শেষে জাতিরজনক আমাকে চাকুরী দিলেন। পেয়েছিলাম জীবনের ঠিকানা কিন্তু পথভ্রষ্ট পথিক হারিয়েছে তাঁর গন্তব্যের ঠিকানা। জীবনের ১৮ টি বছর এই দেশের সরকার/সরকারী আমলা সকল রাজনইতিক দল ও তাদের কর্মকাণ্ড একান্ত নিকট থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই খুনি মোস্তাক থেকে শুরু করে আব্দুস সাত্তার, সায়েম,জিয়া এই এরশাদ পর্যন্ত সবার সাথেই হাত মেলানোর অনেকবার সুযোগ পেয়েছি। একান্ত কাছে থেকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিলো। বক্ষে জড়িয়ে ধরে হু হু করে বোকার মতো কেদেছিলাম নেদারল্যান্ড থেকে আসা এক ঝাক সাংবাদিক, মরহুম আবু সাঈদ চৌধুরী, তাজুদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মন্সুর আলী,সয়েদ নজরুল ইসলাম এর সামনে যেদি প্রথম জাতিরজনকের সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। জাতির জনকের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হলেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নেত্রীত্ব দেবার সুযোগ পাইনি। যতোটা পেরেছি কাজ করেছি। গান লিখেছি, সুর দিয়েছি, গেয়েছি। সেটি জীবীকার নিষ্ঠুর প্রয়োজনে এবং আমার সঙ্গীত সাধনা থেকে পিছিয়ে পড়ার ভয়ে। আমার সে সচিবালয়ের চাকরীটি ১৯৯১ সালে হারিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম । সেই যে পালিয়ে বেড়ানো আর তো ঘরে ফেরা হয়নি। আজ আই শেষ বয়সে ঘরে ফিরতে ভীষণ ইচ্ছে করেফিরে পেতে ইচ্ছে করে জিপিও অফিসের সামনের পুলিশ ও জনতার দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণহীন সংঘর্ষের সেই সে ১৯৯০ সাল। নিজের চাকরী ফেলে আওয়ামী লীগ অফিসে আড্ডা দেয়া আর আলো হ্যালোর সাথে পুলিশের টিয়ার গ্যাস ক্যাস করে আবার পাল্টা পুলিশের গায়ে ছুঁড়ে মারা। ইচ্ছে করে ২৩ ন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউ তে আওয়ামী লীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর গান গাইতে। আজ কেনো হঠাত এ কথা লিখছি। আমি নিজেও জানিনা। তবে হ্যা, বন্ধুগণ, যদি আমি মুক্তি সব কিছু ফেলে চলে যাই, তাহলে আমার এই সব ব্লগগুলো চলবে কিনা? কে করবে এর আপডেট অথবা সংস্করণ? যাকে আমার সব পাসওয়ার্ড দিয়ে যেতে পারি। এ ব্লগগুলো যেন চলে অনাদিকাল পর্যন্ত যতোদিন থাকে এই বিশ্ব ভ্রমান্ড, নেতা নেত্রী দল সরকার জনগণ আর জাতিরজনকের এই সুন্দর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।http://muktimusician.weebly.com

As desired by the Honorable Prime Minister/President of Bangladesh Awami League, Deshratna Sheikh Hasina and Home Minister Adv. Sahara Khatun to publish the whole story of Masterminds Bangabandhu killings on 15 august 1975 and 21 Grenade attack to awami league rally’s in 2004 to kill Sheikh Hasina and Awami leaders including brutal torture, rape and money laundering story of 2001-2006 by bnp jamat. Please tell your friends and well wisher to send this message to all of our beloved awami league, jubo league, chatro league, volunteers league, soinik league, Bangabandhu porisad, Bangabandhu ainjibi porisad & other co organization of BAL worldwide.

বঙ্গবন্ধুর শেষ চিঠি

পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর কিংবা তাকে লেখা বিভিন্ন জনের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিপত্র একদিকে যেমন আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক উপাদান, তেমনি আরেকদিকে বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিকদের জন্য যথেষ্ট শিক্ষণীয়। বিশেষ করে দেশ ও দেশের জনগণকে ভালোবাসলে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, কতটা কষ্টবরণ করতে হয়- সেই শিক্ষা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়ে গেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের যথেষ্ট গুরুত্ব ও আবেদন রয়েছে। 
২০০৮ সালের ফেব্র"য়ারিতে বাংলা একাডেমী থেকে আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র অসাধারণ নেতাই ছিলেন না, ব্যক্তি হিসেবেও তিনি ছিলেন মহান। দেশের জন্য জনগণের জন্য জেলজুলুমের শিকার হয়েছেন, কত ত্যাগ আর কষ্ট করে গেছেন, আজকের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত অনেক নেতার পক্ষেই সেটা কল্পনাতীত। 
'বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ'-এর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন গ্রন্থ প্রণয়নকালে আমরা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল ব্রাঞ্চের দফতর থেকে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করি। শেখ মুজিব সংক্রান্ত ওই নথিপত্রের মধ্যে অনেক চিঠি ছিল। বিভিন্নজনকে বঙ্গবন্ধুর লেখা এবং সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে লেখা কিংবা তাকে নিয়ে নানাজনের চিঠিপত্র পাওয়া গেছে সেখানে। পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গোয়েন্দা সংস্থা এসবি ওই সকল চিঠি বাজেয়াপ্ত করেছিল। ১৯৪৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে বঙ্গবন্ধু দু'টি চিঠি লিখেছিলেন। যা হোক, স্পেশাল ব্রাঞ্চের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিগুলো থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এমন অনেক কিছু তথ্য পেয়েছি যা এ যাবৎ অজ্ঞাত ছিল আমাদের কাছে; মনে হয় তেমনি বাঙালি জাতির অনেকেরও তা জানা ছিল না। রাজনীতির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি অনেক তথ্যই তাতে উঠে এসেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে ১৯৫১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে শেখ মুজিব দু'টি চিঠি লেখেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ জেনারেল সেক্রেটারি শামসুল হক এবং সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে। চিঠি দু'টি একই খামে ভরে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দারা তা বাজেয়াপ্ত করে। শামসুল হককে লেখা চিঠিতে মুজিব এক জায়গায় বলেছেন,
“'... নানা কারণে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়াছি, আমার কোন কিছুর দরকার নাই। যদি ২/১ খানা ভাল ইতিহাস অথবা গল্পের বই পাঠাতে পারেন তবে সুখী হব। বহুদিন মওলানা সাহেবের কোন সংবাদ পাই নাই, এখন কেমন আছেন এবং কোথায় আছেন জানালে সুখী হব। আপনার শরীর কিরূপ, বন্ধু-বান্ধবদের আমার সালাম দিবেন কোন রকম ভয়ের কারণ নাই, তাদের জানাবেন। আমি শীঘ্রই আরোগ্য লাভ করবো বলে আশা করি, বাকি খোদা ভরসা।...'” 
অন্যদিকে মানিক মিয়াকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, 'শুনে সুখী হবেন, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি কারণ আর কতদিন বাবার পয়সার সর্বনাশ করা যায়। আর শরীরের অবস্থাও ভাল না। কারণ হঠাৎ ঢাকা জেলে আসার পর থুথুর সাথে পর পর তিনদিন কিছু রক্ত পড়ে, তবে সে রক্ত সর্দি শুকাইয়াও হতে পারে আবার হাঁচি খুব বেশি হয় বলে অনেক সময় গলা থেকেও রক্ত পড়তে পারে। আর কাশের সাথেও হতে পারে, তাই নিজের থেকে হুঁশিয়ার হয়ে যাওয়া ভাল।' 
একই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু আরও লিখেছেন: 
'ঢাকা জেলের সুপার সাহেব খুব ভাল ডাক্তার, তাই শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবো বলে আশা করি। চিন্তার কোনই কারণ নাই। জেলখানায়ও যদি মরতে হয় তবে মিথ্যার কাছে কোনদিন মাথা নত করবো না। আমি একলা জেলে থাকতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না। কাজ করে যান খোদা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। আমার জন্য কিছুই পাঠাবেন না। আমার কোন কিছুরই দরকার নাই। নতুন চীনের কিছু বই যদি পাওয়া যায় তবে আমাকে পাঠাবেন। চক্ষু পরীক্ষার পর আপনাকে খবর দিবো। কারণ চশমা কিনতে হইবে। নিজেই দরখাস্ত করে আপনার সাথে দেখা করতে চেষ্টা করব।' 
শুধুমাত্র জেলবন্দি থাকা অবস্থাতেই নয়, জেলের বাইরে অবস্থানের সময়ও শেখ মুজিবের লেখা অনেক চিঠি স্পেশাল ব্রাঞ্চ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করে। ১৯৫২ সালের ২৮শে মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে শেখ মুজিব দু'টি চিঠি লেখেন ঢাকার হাটখোলা রোডে ঠিকানায় মানিক মিয়াকে এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দারাবাদের ঠিকানায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। ইংরেজিতে লেখা দু'টি চিঠিই গোয়েন্দা পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। দু'টি চিঠির মাধ্যমে দু'জনকে মুজিব জানিয়েছেন তার শারীরিক অসুস্থতা-বিশেষ করে রক্ত আমাশয়ে (Blood dysentry) আক্রান্ত হওয়ার কথা। ১৬ এপ্রিলের আগেই ঢাকায় রওয়ানা হওয়ার কথা। মানিক মিয়াকে চিঠিতে তার পত্রিকা যে কোন মূল্যে চালিয়ে যাওয়া এবং তার জন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে শেখ মুজিব দলীয় কর্মী ওয়াদুদ (ইত্তেফাকে কর্মরত। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির পিতা) অসুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে তার জন্য গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছে লেখা চিঠিতে তাকে দেখার অধীর আগ্রহ ব্যক্ত করার পাশাপাশি শেখ মুজিব তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কিত মন্তব্যের সঙ্গে নিজের শারীরিক অবস্থা-বিশেষ করে বিগত আড়াই বছরের কারারুদ্ধ অবস্থায় তার শরীর ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টিও জানিয়েছেন। হাটখোলা রোডে মানিক মিয়ার ঠিকানায় তাকে চিঠি লেখার অনুরোধ জানিয়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মাধ্যমে বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের সালাম জানিয়েছেন শেখ মুজিব। ১৬ এপ্রিলের পূর্বে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে মানিক মিয়ার একটি চিঠির জবাবে ৬ এপ্রিল মুজিব টুঙ্গিপাড়া থেকে আরেকটি চিঠি লিখেছেন। মানিক মিয়াকে ইংরেজিতে লেখা সে চিঠিটাও গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার ওয়ারী পোস্ট অফিস থেকে জব্দ করে। ওই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু ঢাকার মানিক মিয়ার সঙ্গে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কারণ তার অসুস্থ শরীরে হোটেলের খাবার সহ্য হবে না। ওই চিঠি পড়ে জানা যায়, ১৫ এপ্রিল গোপালগঞ্জে তার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় প্রদানের কথা আছে, রায় কী হবে সেটা তিনি জানেন না। তবে যে কোনো পরিস্থিতি বরণ করতে তিনি প্রস্তুত। চিঠিতে শেখ মুজিব বলেন, 'Manik Bhai I can not forget your love and affection 
(মানিক ভাই, আমি আপনার ভালবাসা এবং স্নেহের কথা বিস্মৃত হতে পারি না।)' 
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পথ কুসুমার্স্তীর্ণ ছিল না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগ্রাম করে যে তাকে এগোতে হয়েছে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ফাইল থেকে পাওয়া চিঠিপত্রে বর্ণিত বিষয়গুলিই তার সাক্ষ্য। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আর মিথ্যা মামলায় তাকে বার বার জেলে যেতে হয়েছে। তাতে তিনি কাবু হন নি।
১৯৫৮ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক বন্দি থাকা অবস্থায় বাবা শেখ লুৎফর রহমানকে লেখা পুলিশ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত এক চিঠিতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন,  '... মা এবার খুব কষ্ট পেয়েছিল; কারণ এবার তার সামনেই আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। দোয়া করবেন মিথ্যা মামলায় আমার কিছুই করতে পারবে না। আমাকে ডাকাতি মামলার আসামীও একবার করেছিল। আল্লাহ আছে, সত্যের জয় হবেই। আপনি জানেন, আমার কিছু নাই। দয়া করে ছেলেমেয়েদের দিকে খেয়াল রাখবেন। বাড়ি যেতে বলে দিতাম। কিন্তু ওদের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে।' 
আজ নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু পরিবারকেও কম ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়নি। শেষ পর্যন্ত তো জাতির পিতার সঙ্গে সবাই আত্মহুতি দিয়েছেন কেবলমাত্র দুই কন্যা ব্যতীত। এ লেখার প্রতিপাদ্য স্পেশাল ব্রাঞ্চের ফাইল থেকে পাওয়া বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের মধ্যেই সীমিত রাখতে চাই। ওই চিঠিপত্রে আমরা দেখতে পাই, গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে পরিবারের সদস্যরা কেবল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গই বঞ্চিত হননি, বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে তাদেরকে ষাটের দশকের গোড়ায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে স্থিতিশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত বার বার ঠিকানা বদল করতে হয়েছে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় তখন অনেকেই তাদের বাড়ি ভাড়া দিতেও ইতস্তত করতেন। পঞ্চাশ দশকে জেলের বাইরে অবস্থানের সময় শেখ মুজিবকে একেক সময় একেক ঠিকানা ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রে। অনেক চিঠিতে তিনি আবার তৎকালীন পূর্ব পকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ৯৮, নবাবপুর রোডের কার্যালয়ের ঠিকানাও ব্যবহার করেছেন। ১৯৫২ সালের ১৪ জুনে লাহোর থেকে লিখিত সিন্ধু হায়দারাবাদে অবস্থানরত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে লেখা চিঠিতে বঙ্গবন্ধু তার ঠিকানা দিয়েছেন ঢাকার ৭১, রাধিকা মোহন বসাক লেন। ওই চিঠিতে মুজিব তার তৎকালীন নেতা মোহরাওয়ার্দীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, 'Please dont think
for me. I have born to suffer. (অনুগ্রহ করে আমার জন্য ভাববেন না, আমার জন্মই হয়েছে কষ্ট ভোগের জন্য)।'

১৯৫৮ সালের ২১ নভেম্বর, ১২ ডিসেম্বর ও ২৩ ডিসেম্বর এবং ১৯৫৯ সালের ৫ই জানুয়ারি, ২৯ জানুয়ারি ও ১৮ ফেব্র"য়ারিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে স্ত্রী সন্তান ও আইনজীবীসহ অন্যান্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চেয়ে ডিআইজ, এসবি পূর্ব পাকিস্তান রবাবরে লিখিত আবেদনপত্রসমূহে বঙ্গবন্ধু তার সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, 
'Mrs. Fazilaton Nesa, C/O- Sheikh Mujibur Rahman, in front of Sideshwari High School, Dacca. (মিসেস ফজিলাতুন্নেছা, প্রযতে� শেখ মুজিবুর রহমান, সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, ঢাকা।)'

বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের সূত্রে দেখা যায়, কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিব ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা পুলিশ সুপারকে জব্দকৃত জীপ ফেরতদানের, ১৯৫৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর লাইসেন্সকৃত বন্ধুক ও পিস্তল ফেরতদানের, ১৯৬০ সালে ১৮ মার্চ জেল থেকে মুক্তি পাবার পর সরকারকে নিজ গতিবিধি সম্পর্কে, ২২ জুলাই ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় রওয়ানা হওয়ার বিষয়ে প্রভৃতি দরখাস্তে বঙ্গবন্ধু তার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, '76, Segun Bagicha, Ramna, Dacca-2 (৭৬ সেগুনবাগিচা, রমনা, ঢাকা-২)'। আবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় যাওয়ার পর ১৯৬২ সালের ৩ এপ্রিল থেকে নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদনপত্রে তাদের ঠিকানা হিসেবে '677 Dhanmondi residencial Area, Road No. 32, Dacca (৬৭৭ ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, সড়ক নম্বর ৩২, ঢাকা।)' উল্লেখ করা শুরু করেন। 
বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্র সূত্রে জানা যায়, জেলখানায় বসেও তিনি অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কারাগারের বাইরে মুক্ত থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক নেতা ও সহকর্মীদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মত বিনিময়ের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ২৩ আগস্ট ঢাকার নবাবপুরের আওয়ামী মুসলিম লীগের দফতর থেকে করাচির কূটচেরি রোডে সোহরাওয়ার্দীর ঠিকানায় বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, তার ও আতাউর রহমান খানের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে সফর বিপুল সাড়া জাগালেও সংগঠনের জন্য অর্থের প্রয়োজন। পাটের মূল্য কম থাকায় সাধারণ মানুষ অভাব-অনটনে আছে। তাদের কাছে তহবিলের জন্য আবেদন করা যাবে না। একইভাবে ইত্তেফাক-এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখার জন্য আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং অভিভাবকতুল্য সহকর্মী তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকেই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মী- এমন কী মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও চিঠি লিখে তাদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। কারাগারের ভেতর এবং বাইরে থেকে লেখা এ ধরনের চিঠিও তখনকার পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দারা জব্দ করতেও দ্বিধা করেনি। পাকিস্তান সরকারের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিপত্র থেকে একটি জিনিস স্পষ্টই বোঝা যায় যে রাজনৈতিক সহকর্মী বা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অপরিসীম দরদ। অনেক সময় তিনি তাদের পরিবার-পরিজনকে চিঠি লিখে সান্ত্বনা বা সহমর্মিতা জানিয়েছেন। 
ছাত্রনেতা খালেক নেওয়াজ গ্রেপ্তার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ৬ জুলাই নববাবপুর রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে খালেক নেওয়াজের মায়ের উদ্দেশ্যে আচারগাঁও, পোস্ট নান্দাইল, ময়মনসিংহের ঠিকানায় একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে তিনি বলেন, 
'... আপনার ছেলে খালেক নেওয়াজ আজ জেলখানায়। এতে দুঃখ না করে গৌরব করাই আপনার কর্তব্য। যদি কোন কিছুর দরকার হয়, তবে আমায় জানাতে ভুলবেন না। আমি আপনার ছেলের মত। খালেক নেওয়াজ ভাল আছে। জেলখানা থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে। সে মওলানা ভাসানী সাহেবের সাথে আছে।' তেমনি আবার ১৯৬৬ সালের ৪ আগস্টে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বগুড়া জেলা কারাগারে বন্দি নূরুল ইসলাম চৌধুরীকে লিখিত এক চিঠিতে শেখ মুজিব বলেন, 'বোধহয় আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে। ভাবী বুড়া হয়েছেন, বার বার বগুড়া যেতে কষ্ট হয়। কেমন আছেন আমাকে জানালে বাধিত হব। আমি অনেক জেল খেটেছি আমার জন্য ভাববেন না।' 
বিভিন্ন জনকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিই শুধু নয়, বঙ্গবন্ধুকে লেখা অনেকের চিঠিও পাকিস্তান সরকারের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বাজেয়াপ্ত করেছিল। সে সকল চিঠি থেকে জাতির জনক সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বড় কথা হলো, এসব চিঠিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আবেগ ও উদ্বেগসহ অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার টান পরিস্ফুট হয়েছে। ১৯৫১ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকার ১৮ নং কারকুন বাড়ি লেন থেকে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুজিবকে লেখা একটি চিঠিতে বলেন, 
'.... তোমার মুক্তির জন্য সরকারের দৃষ্টি বহুবার আকর্ষণ করিয়াছি, কিন্তু ছেলে অন্ধ হইলে নাম পদ্মলোচন রাখলে লাভ কি। ধৈর্য ধারণ কর। আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন। দেশের মুক্তির সঙ্গে তোমার মুক্তি।' ১৯৫২ সালের ২৯ মার্চ ঢাকা থেকে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া টুঙ্গিপাড়ার ঠিকানায় বঙ্গবন্ধুকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন : 'The condition at Dacca is still uncertain. Arrests are continuing. Shamsul Haq has surrendered on 19th. Khaleque Newaz and Aziz Ahmed surrendered on 27th & 28th respectively. There is no information from Moulana Sahib. Long ago we recived communication from him that he was suffering from blood pressure. (ঢাকায় পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। ধরপাকড় চলছে। শামসুল হক আত্মসমর্পণ করেছেন ১৯ তারিখে। খালেক নওয়াজ এবং আজিজ আহমেদ যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ তারিখে আত্মসমর্পণ করেছেন। মওলানা সাহেবের কাছ থেকে অনেক দিন কোন খবর নেই। শুনেছিলাম তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।)' 
বঙ্গবন্ধুকে লেখা নামজাদা ব্যক্তিবর্গের নয়, মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মীর লেখা চিঠিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। শেখ মুজিব যখন আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তখন ঢাকার জিপিও থেকে আটক ও বাজেয়াপ্তকৃত ঢাকার পল্টন হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র আবদুল কাদের মিয়ার চিঠিতে বলা হয়,
'... এখন হইতে পত্রিকা ও ২ খানা 'আওয়ামী লীগের' ম্যানিফেস্টো পাঠাইয়া দিলে 'আওয়ামী লীগ' আরেও জনপ্রিয় হইয়া উঠিবে। ইহাই আমার আকুল প্রার্থনা, আপনার নিকট, ভাই সাহেব আপনার সহকর্মীদের কাছে আমার সালাম বলিবেন।' ১৯৫৪ সালের ৮ অক্টোবর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা বন্দি শেখ মুজিবের ঠিকানায় চিঠি লেখেন জনৈক শহীদ। মুজিবকে 'ভাইজান' বলে সম্বোধন করে ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, '... অনেকে কাঁদে, অনেকে দুঃখ করে আর আমাদের অপবাদ দেয়। বলে তোমরা কেন 'তাকে' জেলে রেখে চুপ করে বাইরে আছ। গোপালগঞ্জের মানুষ প্রতিটি মুহুর্তে তারা ফরিয়াদ জানায় আল্লাহর কাছে তাদের প্রিয় নেতার জন্য। কত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আল্লাহর দরবারে ' রোজা নামাজ মানত' করে আপনার মামলার তারিখে।'  ১৯৬৬ সালের ১৫ অক্টোবর কুমিল্লার উত্তর চর্থা থেকে মো. আছমত আলী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুজিবকে এক চিঠিতে বলেন,'... ক্ষুদ্র জীবনে দেশ ও সমাজের জন্য সত্যিকারভাবে 'সেবার' মনোভাব নিয়া যতটুকু কাজ করিতে পারিয়াছি তার জন্য মালিকের দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করিতেছি, সত্যিকারের কর্মীরা পদ মর্যাদা ও অর্থ লোভের জন্য রাজনীতি করে না। সেই জন্য তাদের স্ত্রী-পরিবার ঔষধের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। জেলে গেলে এদের পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন স্বযং খোদা। বিশেষ আর কি লিখিব। কায়মনবাক্যে সর্বশক্তিমানের দরবারে আপনার মঙ্গল কামনা করি, দোয়া করিবেন।'
মো. আছমত আলীর একই চিঠিতে পুনশ্চ হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শেষ পত্রের দু'টি বাণীর উদ্ধৃতি দেওয়া আছে,
(১) কেউ যদি কাজ না করে তবে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। কেবল জনসভা করাই যথেষ্ট নয়। মুসলিম লীগকে গড়তে কী পরিশ্রম না আমরা করেছি। আজও ঠিক সেইভাবে ব্যাপক খাঁটা-খাটুনির দরকার।
(২) .. মনে হয় না, রাজনীতি করার মত মন আমার হবে। আয়কর আর দেনাদায়িক মিটানোর জন্য সব কিছু ছেড়ে আমাকে টাকা আয়ে মন দিতে হবে। দেখ আমরা যারা আগের জমানার নেতা তারা কেবল নিয়মতান্ত্রিক পথেই চলতে জানি কিন্তু তাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
---------------------------------------------------------------------------------------
লিখেছেন মোনায়েম সরকার, আজকের বিডিনিউজ২৪ডটকম-এ প্রকাশিত। মোনায়েম সরকার একজন রাজনীতিক ও গবেষক  

No comments:

Post a Comment

thanks for your important comments