আমার কথা

একটি কথা না বললেই নয়। আমার বন্ধুরা আপনারা দেখে থাকবেন হয়তো আমার সব ব্লগ এবং ওয়েবগুলোতে জাতির জনক বংগবন্ধু এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিষয়াদিই সবচে' গুরুত্ব পেয়ে থাকে। আমি সব সময় তাদের কথাই বলি কারন এর ছাড়া আমার নিজের কোন কথা বলার নেই। কারন আমার তো কোন অবদান জাতির জন্য, দেশের জন্য সর্বোপরি দেশের মানুষের জন্য নেই বা ছিলোওনা। কাজেই ঘুরে ফিরে আমার এই ১৬০ টি ব্লগ এবং ওয়েব সাইটে জাতিরজনক এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার কথাই বলার চেষ্টা করেছি। আমার এই প্রবাসের এতোগুলো বছরে গড়ে তোলা সেই যে যেদিন থেকে ইন্টারনেট চালু হল সেদিন থেকে অদ্যাবধি এই যে অবিরাম কম্পিউটারে বসে বসে দিন নেই রাত নেই যে ছবিগুলো দেখতে অসুন্দর, সেটিকে সুন্দর করার ব্যর্থ প্রয়াস।অনেকগুলো আবার অনেক সময় কি জানি প্রফেশনাল ডিজাইনারদের কাজের চেয়েও অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। যা' আমার সব ব্লগগুলোতে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। কোন নেতা আমার প্রশংসা করলো বা কোন নেতা আমার সাইটতুলো দেখলো বা না দেখলো তাঁর জন্যে আমি এতোটুকু পিপাসিত নই, কষ্ট লাগবে যদি আমার অক্ষমতার কারনে এ গুলো ক্রমানয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়।সেই যে মুক্তিযদ্ধ শেষে জাতিরজনক আমাকে চাকুরী দিলেন। পেয়েছিলাম জীবনের ঠিকানা কিন্তু পথভ্রষ্ট পথিক হারিয়েছে তাঁর গন্তব্যের ঠিকানা। জীবনের ১৮ টি বছর এই দেশের সরকার/সরকারী আমলা সকল রাজনইতিক দল ও তাদের কর্মকাণ্ড একান্ত নিকট থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই খুনি মোস্তাক থেকে শুরু করে আব্দুস সাত্তার, সায়েম,জিয়া এই এরশাদ পর্যন্ত সবার সাথেই হাত মেলানোর অনেকবার সুযোগ পেয়েছি। একান্ত কাছে থেকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিলো। বক্ষে জড়িয়ে ধরে হু হু করে বোকার মতো কেদেছিলাম নেদারল্যান্ড থেকে আসা এক ঝাক সাংবাদিক, মরহুম আবু সাঈদ চৌধুরী, তাজুদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মন্সুর আলী,সয়েদ নজরুল ইসলাম এর সামনে যেদি প্রথম জাতিরজনকের সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। জাতির জনকের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হলেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নেত্রীত্ব দেবার সুযোগ পাইনি। যতোটা পেরেছি কাজ করেছি। গান লিখেছি, সুর দিয়েছি, গেয়েছি। সেটি জীবীকার নিষ্ঠুর প্রয়োজনে এবং আমার সঙ্গীত সাধনা থেকে পিছিয়ে পড়ার ভয়ে। আমার সে সচিবালয়ের চাকরীটি ১৯৯১ সালে হারিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম । সেই যে পালিয়ে বেড়ানো আর তো ঘরে ফেরা হয়নি। আজ আই শেষ বয়সে ঘরে ফিরতে ভীষণ ইচ্ছে করেফিরে পেতে ইচ্ছে করে জিপিও অফিসের সামনের পুলিশ ও জনতার দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণহীন সংঘর্ষের সেই সে ১৯৯০ সাল। নিজের চাকরী ফেলে আওয়ামী লীগ অফিসে আড্ডা দেয়া আর আলো হ্যালোর সাথে পুলিশের টিয়ার গ্যাস ক্যাস করে আবার পাল্টা পুলিশের গায়ে ছুঁড়ে মারা। ইচ্ছে করে ২৩ ন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউ তে আওয়ামী লীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর গান গাইতে। আজ কেনো হঠাত এ কথা লিখছি। আমি নিজেও জানিনা। তবে হ্যা, বন্ধুগণ, যদি আমি মুক্তি সব কিছু ফেলে চলে যাই, তাহলে আমার এই সব ব্লগগুলো চলবে কিনা? কে করবে এর আপডেট অথবা সংস্করণ? যাকে আমার সব পাসওয়ার্ড দিয়ে যেতে পারি। এ ব্লগগুলো যেন চলে অনাদিকাল পর্যন্ত যতোদিন থাকে এই বিশ্ব ভ্রমান্ড, নেতা নেত্রী দল সরকার জনগণ আর জাতিরজনকের এই সুন্দর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।http://muktimusician.weebly.com

As desired by the Honorable Prime Minister/President of Bangladesh Awami League, Deshratna Sheikh Hasina and Home Minister Adv. Sahara Khatun to publish the whole story of Masterminds Bangabandhu killings on 15 august 1975 and 21 Grenade attack to awami league rally’s in 2004 to kill Sheikh Hasina and Awami leaders including brutal torture, rape and money laundering story of 2001-2006 by bnp jamat. Please tell your friends and well wisher to send this message to all of our beloved awami league, jubo league, chatro league, volunteers league, soinik league, Bangabandhu porisad, Bangabandhu ainjibi porisad & other co organization of BAL worldwide.

বঙ্গবন্ধু হত্যা ও আনুষঙ্গিক প্রসঙ্গ।

আমার এই লিখার মূল উৎস হলো 'হৃৎকমল' নামক একটি ফেচবুক আইডি থেকে আমার একটি পোস্টে নিম্নের উক্তিটি করেছিলেন, তারই জবাবে।
"আর শেখ মুজিবকে কোন সাধারণ মানুষ হত্যা করেনি। তার নিজের রক্ষক এবং আক্ষরিক অর্থেই তার দল বাকশালের লোকেরা হত্যা করেছিল। হতায়কারিদের নেতা সবাই বাকশাল সদস্য ছিল। আর হত্যার পর লাভবান হয়েছিল যারা এবং ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের লাশ ফেলে রেখে নতুন সরকারে মন্ত্রী হওয়ার জন্য লাইন দিয়েছিল তারা সবাই তার দলের লোক ছিল। সেই বেঈমানদের সন্তানাদিরাই এখন যাকে তাকে শেখ মুজিব হত্যার জন্য দায়ি করে বেড়ায়। আর আমি যুগাধিক কাল শীর্ষ প্রেস মিডিয়ায়কি করেছি না করেছি তা কোন চোর-ছ্যাচ্ছরদের ওয়ারেশদের না জানলেও চলবে।" 



আবারও আপনাকে নিয়ে উপভোগের বিষয় পেলাম, তাই আমার পোস্টের মন্তব্যে আপনার শেষ অধ্যায়টির উদ্ধৃতি থেকে আমার জবাবটা দিলাম। আমি অবশ্য কর্ণেল তাহেরকে নিয়ে একটা পোস্ট দেবো বলে মনে করেছিলাম। কারণ তাহের হত্যার বিচার তো তার দলের লোকেরা এবং আর আত্মীয় স্বজন পেলেন, কিন্তু তাহের যে জিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর হত্যায় জড়িত ছিলেন, তার বিচারটা কবে হবে। জাতির কাছে এই প্রশ্ন রেখে, তাহেরকে নিয়ে আমার রচনার উদ্দেশ্য ছিল। যাহোক আপনার এই উক্তিটি আমার পোস্টে পাওয়াতে, আপনার উদ্দেশ্যেই তা উৎসর্গ করলাম। কারণ কালো চশমা পড়ে, আলোতে দেখা যায় আবছা ভাবে, অন্ধকারে তো কিছুই না। কালো চশমা পড়ে অভ্যস্থ আপনারা, তাই অন্ধকারেটুকু কি দেখতে পাবেন? চেষ্টা করুন একটু দেখার। তাই উপরে আপনার উদ্ধৃতি উপর ভিত্তি করে কিছুটা বলার চেষ্টা করলাম।

নিচের বোল্ড করা অংশটুকু তাহেরের শেষ চিঠি থেকে নেয়া:
রায় শুনে আমাদের আইনজীবীরা হতবাক হয়ে গেলেন। তারা এসে আমাকে জানালেন, যদিও এই ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না তবুও তারা সুপ্রিম কোর্টে রিট করবেন। কারণ বেআইনিভাবে এই আদালত তার কাজ চালিয়েছে ও রায় দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করবেন বলে বললেন। আমি তাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলাম, প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করা চলবে না। এই প্রেসিডেন্টকে আমি প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়েছি, এই বিশ্বাসঘাতকদের কাছে আমি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারি না

"এই প্রেসিডেন্টকে আমি প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়েছি। এই বিশ্বাসঘাতকদের কাছে আমি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারি না।" তিনি যখন চিঠিটি লিখেন, তখন সরকারে কারা ছিল? যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, তারাই। কারণ তারই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদেরকে পুণর্বাসন করেছিল, হত্যাকারীদের বিচার না করে তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল ইত্যাদি, যা কারই অজানা নেই। এছাড়াও স্বাধীনতা বিরোধীদেরও তারা পুণর্বাসন করেছিল। কর্ণেল তাহের তার চিঠিতে নিজেই উপরোক্ত স্বীকার উক্তি দিয়ে প্রমান করেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। কারণ তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, 'এই প্রেসিডেন্টকে আমি প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়েছি।' এই বসানোর পিছনে তাহেরের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পিছনে ছিল আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিশাল থাবা, আর এই হত্যাকারীরা ছিল তাদের ক্রীতদাস। মুক্তি যুদ্ধে পাকিস্তান হেরে যাওয়াতে, পাকিস্তানের সহায়তাদানকারী(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদী্ আরব ও চীন) আহত হায়েনারা মরন থাবা দেয়ার জন্য সুযোগের সন্ধানে ছিল ওৎপেতে বসেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছিল বিপথগামী কিছু সেনাবাহিনী এবং বেইমান উচ্চাভিলাষী আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে। আর চীন তার জাল বিছিয়েছিল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মুলমন্ত্রদানকারী অতি বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক মোল্লাদেরকে দিয়ে। আর সৌদীর প্রচেষ্টা ছিল রাজাকারদেরকে আবার পুনর্বাসন করা নিয়ে। যা তৎকালীন সময়কার পেক্ষাপট বিশ্লেষন করলেই স্পষ্ট বুঝা যায়। নিচের উদ্ধৃতিগুলো বিশ্লেষন করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

নিচের বোল্ড করা অংশটুকু তাহেরের শেষ চিঠি থেকে নেয়া:

জলিল, রব, জিয়া আমাকে দৃঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো। এই আলিঙ্গন অবিচ্ছেদ্য। এমনিভাবে দৃঢ় আলিঙ্গনে আমরা গোটা জাতির সঙ্গে আবদ্ধ। কেউ তা ভাঙতে পারবে না।
বিভিন্ন সেলে আবদ্ধ কয়েদি ও রাজবন্দীরা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে বন্ধ সেলের দরজা-জানালা দিয়ে। মতিন সাহেব, টিপু বিশ্বাস ও অন্যান্যরা দেখালো আমাকে বিজয় চিহ্ন। এই বিচার বিপ্লবীদেরকে তাদের অগোচরে ঐক্যবদ্ধ করলো।


সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় থেকে কোন সেনাকর্মকর্তার রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই, অথচ কর্ণেল তাহের তার বক্তব্যতে স্পষ্ট করেছিলন, তিনি সেনাবাহিনিতে থাকাকালীন অবস্থায় প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই রাজনীতি ছিল কোনটি? রব, জলিল, ইনু এরা কোন রাজনীতি করতো? এরাই ছিল তখনকার অতি বিফ্লবী সমাতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল জাসদের নেতৃত্বে এবং কর্ণেল তাহের ছিল এদের ইন্ধনদাতা। যিনি সব সময় কল্পনা করতো, চীনের আদলে সেনাবাহিনী তৈরী করে দেশ শাসন করবেন, যা মেজন ডালিমের স্বীকারোক্তিতে পাওয়া যায়।

স্বাধীনতার পর দেশে সরকার যেন স্থির অবস্থায় না থাকতে পারে এটাই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান লক্ষ্য। তাই এই অতি বিপ্লবী রাকজনীতিকদেরকে তারা ক্রীতদাস বানিয়ে, তাদের দ্বারা দেশের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি কারই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এই সময় জাসদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই তা প্রমান করে যে, তারা আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শত্রুদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েই এখানে কার্যক্রম চলিয়েছিল। এরা তখন জঘন্যতম অপরাধের কিই না করেছিল। সমাজতন্ত্রের অপব্যাখ্যা প্রদান করে, এদেশের তরুণ সমাজকে তারা জঙ্গী বানাতে তারা এতটুকুও কুণ্ঠাবোধ করেনি। যা বর্তমানে ইসলামী জঙ্গীবাদীরা করছে। তাদের মুল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যেন তেন ভাবে সিংহাসন দখল করা। তাই তারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র কায়েমের কথা বলে, তরুণ সমাজকে লেলিয়ে দিয়েছিল। তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য তারা যুদ্ধে ব্যবহারকৃত অস্ত্রগুলো জমা না দিয়ে, তারা তৎকালীন সময় সমাজের তরুণদের হাতে তুলে দিয়েছিল সেইসব অস্ত্র। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য কখনই ডাকাতি হতে পারে না। কিন্তু এরা তাই করতো। এর সগ্রামের ব্যয়ের নামে অর্থ মানুষের বুকে অস্ত্র ধরে এরা অর্থ সংগ্রহ করতো। এরা মানুষের কাছে চিঠি সাথে কাফনের কাপড় ও বুলেট পাঠিয়ে, ভয় দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করতো। এরা বেছে বেছে বুদ্ধিজীবি, বিজ্ঞ রাজনীতিকদের হত্যা করতো। সমাজে যত প্রকারের বিশৃঙ্খলা করার, এরা তাই করতো। জলিল, রব, ইনু, জিকু, সিরাজ সিকদার, সিরাজুল ইসলাম সহ আরও অনেকই ছিল এদের হোতা এবং ব্যাকসাইট লিডার হিসাবে ছিল কর্ণেল তাহের। '৭৫-এর নভেম্বর যখন জিয়াকে বন্দি করেছিল, মোশারফ বাহিনীকে নির্মুল করা হলো এবং জিয়াকে মুক্তির নামে পরবর্তী সময়টাতে যা কিছু ঘটেছিল, তা ছিল কর্ণেল তাহেরের নির্দেশিত সাজানো নাটক।

শেখ মুজিবকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপ ছিল, সেনাবাহীনির মধ্য থেকে স্বাধীনতার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হত্যাকরা। তা তারা ঘটিয়েছিল নভেম্বরে। এরপরেই ধাপ ছিল জিয়ার সাথে কর্ণেল তাহেরের সিংহাসন ভাগাভাগির সন্ধি। কারণ জিয়াকে উদ্ধারের সময় ইনু একজন রাজনীতিবিদ হয়ে ক্যান্টমেন্টে তখন অবস্থান করছিল। এই ইনু ছিল জাসদের সশস্ত্র সংগ্রামের প্রধান সেনাপতি। তার নেতৃত্বেই তরুণদেরকে সশস্ত্র সংগ্রামের উদ্বুদ্ধ করা হতো। কর্ণেল তাহের ভাল করেই জানতো যে, জিয়া ছিল অত্যন্ত ক্ষমতা লিপ্সু একজন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা। কারণ এই জিয়া স্বাধীনতা ঘোষনাপত্র রেডিওতে পাঠ করতে গিয়ে, নিজেকে প্রেসিডেন্ট বলে নিজেকে দাবী করেছিল। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের মুখে শেখ মুজিবের নাম উল্লেখ করেছিল। জিয়ার এই চরিত্রের কারণেই কর্ণেল তাহেরের খুব ভাল করেই জানা ছিল। তাই খন্দকার মুশারফ বাহিনীকে খতম করার পরেও কর্ণেল তাহের জিয়াকে বন্দি দশা থেকে মুক্ত না করে, জিয়ার সাথে ক্ষমতা ভাগাভগির সন্ধি জন্য অপেক্ষা করছিল। জিয়া ছিল বিশ্ব মতলববাজ লোক। সে ছিল সেরের উপর সোয়াসের। নিজেকে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য কর্ণেল তাহেরের সব প্রস্তাবে রাজি হয় এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, ওস্তাদের মার শেষ রাতেই দেখাবো। এবং দেখিয়েই ছেড়েছে সে। জিয়া বন্দি অবস্থা থেকে বের হয়েই ভাবলেন ওস্তাদের মার শেষ রাতে কিভাবে দেয়া যেতে পারে। এরাতো মুক্তিযোদ্ধা, আবার সেনাবাহীনির সাথে এদের গভীর সম্পর্ক আছে, এরা যে কোন সময় যা খুশি তা করতে পারে, এমনও হতে পারে একচটকানীতে তারে উল্টায়ে দিতে পারে। তাই জিয়া স্বাধীনতার কে শত্রু আর কে যুদ্ধাপরাধী তা বিচার না করে, ক্ষমতার লোভে জামাত শিবিরকে সঙ্গে নেবার বাসনায় তাদেরকে পুণর্বাসন করা শুরু করলো এবং বৈজ্ঞানীক সমাজতন্ত্রের স্বপ্নধারী, অবৈজ্ঞানীক মোল্লা কমরেডদেরকে এক যোগে জেলের মধ্যে পুরলেন। এটাই ছিল জিয়ার ওস্তাদের মার শেষ রাতে।

কর্ণেল তাহেরের উপরোক্ত উক্তির এই অংশে তা স্পষ্ট ফুটে উঠে, 'জলিল, রব, জিয়া আমাকে দৃঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো। এই আলিঙ্গন অবিচ্ছেদ্য। এমনিভাবে দৃঢ় আলিঙ্গনে আমরা গোটা জাতির সঙ্গে আবদ্ধ। কেউ তা ভাঙতে পারবে না।' অর্থাৎ জিয়াকে বিশ্বাস করে এখন সে অনুতপ্ত, জিয়ার বিশ্বাসঘাতকতা তাদেরকে চরম শিক্ষা দিয়েছে। তাই এখন থেকে কোনই সন্ধি নয়, সশস্ত্র সংগ্রামই একমাত্র পথ। জলিল, রব, জিয়ার আলিঙ্গনে তাই অনুভুতি লাভ করেছে, তার অবর্তমানে এরাই এই পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।তাহের শেখ মুজিব হত্যাকারীদের মধ্যর যে একহন ছিলেন এবং সেও জিয়ার মত একজন ক্ষমতা লিপ্সু ছিল তাতে কোনই সন্দেহ নেই। 



নিচের বোল্ড করা অংশটুকু তাহেরের শেষ চিঠি থেকে নেয়া:
দেশ সৃষ্টির জন্য আমি রক্ত দিয়েছি। আর সেই সূর্যের জন্য আমি প্রাণ দেব, যা আমার জনগণকে আলোকিত করবে, উজ্জীবিত করবে_এর চাইতে বড় পুরস্কার আমার জন্য আর কী হতে পারে? আমাকে কেউ হত্যা করতে পারে না। আমি আমার সমগ্র জাতির মধ্যে প্রকাশিত। আমাকে হত্যা করতে হলে সমগ্র জাতিকে হত্যা করতে হবে। কোন শক্তি তা করতে পারে? কেউ পারবে না।
কিন্তু বিশ্বাসঘাতক ও চক্রান্তকারী জিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে জনগণের সামনে হেয় করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা কতটা স্বপ্নবিলাসী ছিল তাহেরের এই উক্তিতেই বোঝা যায়, 'আমাকে হত্যা করতে হলে সমগ্র জাতিকে হত্যা করতে হবে। আমি আমার সমগ্র জাতির মধ্যে প্রকাশিত।' আহা! সে মনে করেছিল যে, যুদ্ধে তার এক পা খোড়া হওয়াতে, তার রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা হয়েছে, তাই সব জনগণ তার। ত্রিশ লক্ষ্য শহীদ এবং দুই লক্ষ্য মা-বোনের ইজ্জত কিছুই ছিল না। কি দুঃসাহসিক কথাবর্তা। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেছিল সব জনগণ তার, দেশের জনগণ তাকে যেন স্মরণ করে বসে থাকবে পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত। জনগণ এতই মনে রেখেছে যে, তার মৃত্যুর স্মরণ সভায় একশত জন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। আসলে যারা পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, তারা পথভ্রষ্টই। তাদেরকে মনে রাখার কোনই প্রশ্ন জাগে না। শুধু এটাই না, জনগণতো পরের কথা, তার সঙ্গে যারা ছিল তাদের অবস্থা পরবর্তীতে কি হয়েছিল? যে জলিলকে বুকে জড়িয়ে ধরে তাহের অবিচ্ছেদ্য আলিঙ্গনের উস্মা উপলব্ধি করেছিল, সেই জলিল তাহের মৃত্যুর দশ পনের বছর পরেই, পাকিস্তানে গিয়ে পাক্কা মুসলমান সেজে সেখানেই মরলো। ইনু, রব, জিকু, এদের বর্তমানে কি অবস্থা? একেকজন একেক দলের পা চাটার দালাল হয়ে পড়ে আছে। কি স্বপ্ন ছিল তাহেরের! 'আর সেই সূর্যের জন্য আমি প্রাণ দেব, যা আমার জনগণকে আলোকিত করবে, উজ্জীবিত করবে_এর চাইতে বড় পুরস্কার আমার জন্য আর কী হতে পারে?' আহা! পথভ্রষ্টরা পথভ্রষ্টই। এরা মানুষকে শুধু স্বপ্নই দেখাতে পারে, কিন্তু এদের নিজেদেরই যখন কোন পথ জানা না থাকে, তারা আবার জাতিকে কি পথ দেখাতে পারে? যাদের আলিঙ্গন তাহেরের কাছে অবিচ্ছেদ্য বলে মনে হয়েছিল, তারা নিজেরাই এমন বিচ্ছেদের মধ্যে আছে যে, এখন গণনাই করা যায় না। এক ব্যক্তি, এক দলে পরিণত হয়েছে।

শেখ মুজিবকে হত্যার ষড়যন্ত্রের আগে যদি তাহের এই অনুতপ্তটা করতে পারতো, তাহলে আজ সে সত্যি বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েই থাকতেন এতে কোনই সন্দেহ নেই। কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কাছ থেকে কেউ শিক্ষা নিতেই চায় না। বিশ্বাসঘাতকতা করলে বিশ্বাসঘাতকদের শিকার হতে পারে, এটা যেন ভুলেই যায়। তাহের তার চিঠির এই উক্তি দিয়ে আবারও প্রমান করেছিল, 'কিন্তু বিশ্বাসঘাতক ও চক্রান্তকারী জিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে জনগণের সামনে হেয় করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।' সে নিজেও জানতো না যে তাকে একদিন বলির পাঁঠা রূপে তার পরিণতি ঘটতে পারে।

হৃৎকমল, আর কতদিন মানুষকে বুঝ দেবার কথা বলবেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, তার দলের লোকেরাই। তাহলে ইতিহাস বলবে সিরাজকে হত্যা করেছিল মীরজাফরই, ব্রিটিশ বেনিয়ারা না। হ্যাঁ, ব্রিটিশরা সিরাজকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পরিকল্পনায় মীরজাফরকে ব্যবহার করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে একই কায়দায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরাস্ত শক্তিরাও ব্যবহার করেছিল ঐ বেইমান কিছু নেতাদেরকে, পথভ্রষ্ট বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্বপ্নবিলাসীদেরকে এবং এর রুপকে জন সম্মুখে বড় আকারে প্রচার করার জন্য বাকশালের অনেক নেতাকেই ঐ মসন্ত্রিসভার সদস্য করা হয়েছিল বন্ধুকের নল দেখিয়ে। এই সামান্য বিষয়টি যদি বুঝার ক্ষমতা না থাকে তাহলে রাজনৈতিক বিশ্লেষনমূলক বক্তব্য দেন কোন অধিকারে। তাই প্রথমেই বলেছিলাম, কালো চশমা পড়ে আলোতে কিছু দেখা গেলেও, অন্ধকারের কিছুই দেখা যায় না। যে অন্ধকারে এখনও আপনাদের মত অনেক লোকই পড়ে আছে। আপনিও তাদের বাহিরে নন।


No comments:

Post a Comment

thanks for your important comments