আমার কথা

একটি কথা না বললেই নয়। আমার বন্ধুরা আপনারা দেখে থাকবেন হয়তো আমার সব ব্লগ এবং ওয়েবগুলোতে জাতির জনক বংগবন্ধু এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিষয়াদিই সবচে' গুরুত্ব পেয়ে থাকে। আমি সব সময় তাদের কথাই বলি কারন এর ছাড়া আমার নিজের কোন কথা বলার নেই। কারন আমার তো কোন অবদান জাতির জন্য, দেশের জন্য সর্বোপরি দেশের মানুষের জন্য নেই বা ছিলোওনা। কাজেই ঘুরে ফিরে আমার এই ১৬০ টি ব্লগ এবং ওয়েব সাইটে জাতিরজনক এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার কথাই বলার চেষ্টা করেছি। আমার এই প্রবাসের এতোগুলো বছরে গড়ে তোলা সেই যে যেদিন থেকে ইন্টারনেট চালু হল সেদিন থেকে অদ্যাবধি এই যে অবিরাম কম্পিউটারে বসে বসে দিন নেই রাত নেই যে ছবিগুলো দেখতে অসুন্দর, সেটিকে সুন্দর করার ব্যর্থ প্রয়াস।অনেকগুলো আবার অনেক সময় কি জানি প্রফেশনাল ডিজাইনারদের কাজের চেয়েও অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। যা' আমার সব ব্লগগুলোতে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। কোন নেতা আমার প্রশংসা করলো বা কোন নেতা আমার সাইটতুলো দেখলো বা না দেখলো তাঁর জন্যে আমি এতোটুকু পিপাসিত নই, কষ্ট লাগবে যদি আমার অক্ষমতার কারনে এ গুলো ক্রমানয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়।সেই যে মুক্তিযদ্ধ শেষে জাতিরজনক আমাকে চাকুরী দিলেন। পেয়েছিলাম জীবনের ঠিকানা কিন্তু পথভ্রষ্ট পথিক হারিয়েছে তাঁর গন্তব্যের ঠিকানা। জীবনের ১৮ টি বছর এই দেশের সরকার/সরকারী আমলা সকল রাজনইতিক দল ও তাদের কর্মকাণ্ড একান্ত নিকট থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই খুনি মোস্তাক থেকে শুরু করে আব্দুস সাত্তার, সায়েম,জিয়া এই এরশাদ পর্যন্ত সবার সাথেই হাত মেলানোর অনেকবার সুযোগ পেয়েছি। একান্ত কাছে থেকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিলো। বক্ষে জড়িয়ে ধরে হু হু করে বোকার মতো কেদেছিলাম নেদারল্যান্ড থেকে আসা এক ঝাক সাংবাদিক, মরহুম আবু সাঈদ চৌধুরী, তাজুদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মন্সুর আলী,সয়েদ নজরুল ইসলাম এর সামনে যেদি প্রথম জাতিরজনকের সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। জাতির জনকের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হলেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নেত্রীত্ব দেবার সুযোগ পাইনি। যতোটা পেরেছি কাজ করেছি। গান লিখেছি, সুর দিয়েছি, গেয়েছি। সেটি জীবীকার নিষ্ঠুর প্রয়োজনে এবং আমার সঙ্গীত সাধনা থেকে পিছিয়ে পড়ার ভয়ে। আমার সে সচিবালয়ের চাকরীটি ১৯৯১ সালে হারিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম । সেই যে পালিয়ে বেড়ানো আর তো ঘরে ফেরা হয়নি। আজ আই শেষ বয়সে ঘরে ফিরতে ভীষণ ইচ্ছে করেফিরে পেতে ইচ্ছে করে জিপিও অফিসের সামনের পুলিশ ও জনতার দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণহীন সংঘর্ষের সেই সে ১৯৯০ সাল। নিজের চাকরী ফেলে আওয়ামী লীগ অফিসে আড্ডা দেয়া আর আলো হ্যালোর সাথে পুলিশের টিয়ার গ্যাস ক্যাস করে আবার পাল্টা পুলিশের গায়ে ছুঁড়ে মারা। ইচ্ছে করে ২৩ ন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউ তে আওয়ামী লীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর গান গাইতে। আজ কেনো হঠাত এ কথা লিখছি। আমি নিজেও জানিনা। তবে হ্যা, বন্ধুগণ, যদি আমি মুক্তি সব কিছু ফেলে চলে যাই, তাহলে আমার এই সব ব্লগগুলো চলবে কিনা? কে করবে এর আপডেট অথবা সংস্করণ? যাকে আমার সব পাসওয়ার্ড দিয়ে যেতে পারি। এ ব্লগগুলো যেন চলে অনাদিকাল পর্যন্ত যতোদিন থাকে এই বিশ্ব ভ্রমান্ড, নেতা নেত্রী দল সরকার জনগণ আর জাতিরজনকের এই সুন্দর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।http://muktimusician.weebly.com

As desired by the Honorable Prime Minister/President of Bangladesh Awami League, Deshratna Sheikh Hasina and Home Minister Adv. Sahara Khatun to publish the whole story of Masterminds Bangabandhu killings on 15 august 1975 and 21 Grenade attack to awami league rally’s in 2004 to kill Sheikh Hasina and Awami leaders including brutal torture, rape and money laundering story of 2001-2006 by bnp jamat. Please tell your friends and well wisher to send this message to all of our beloved awami league, jubo league, chatro league, volunteers league, soinik league, Bangabandhu porisad, Bangabandhu ainjibi porisad & other co organization of BAL worldwide.

Friday, September 25, 2015

মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের বক্তব্য

come to mukthi and learn the truth

মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের বক্তব্য

Picture

আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ হতে গণহত্যা শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। আইনের পরিভাষায় ’জেনোসাইড’ বলতে কেবল মাত্র কোন জনপদে হত্যাযজ্ঞ সংগঠনের অপরাধকেই বোঝায়না, বরং কোন জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচিতি ও প্রকৃতি বলপূর্বক পরিবর্তন করার উদ্দেশ্য নিয়ে ওই জনসমষ্টির জানমাল ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতিসাধনের সাথে সাথে তার নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি উপর যে কোন সুপরিকল্পিত হামলা গণহত্যার সংজ্ঞার আওতাভুক্ত।
যে কোন জনপদে যে কোন সশস্ত্র সংঘর্ষের অনিবার্য্য পরিণতি হিসেবেই জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এ সব ক্ষেত্রে যুদ্ধের নিয়ম বহির্ভূত ভাবে যারা নরহত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি ধ্বংস ইত্যাদি মারাত্মক অপরাধ করে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদের বিচার ও শান্তি হয়। কিন্তু এই ধ্বংসযজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য যদি হয় সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য সমূহ বিনষ্ট করে দেওয়া, এবং সংঘটিত ধ্বংসযজ্ঞ যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে সম্পাদন করা হয়, তবেই তা গণহত্যার অপরাধহিসেবে বিবেচিত হয়। এ সব ক্ষেত্রে যারা সরাসরি ধ্বংসযজ্ঞে অংমগ্রহণ করে শুধু তারাই নয়, বরং এই ধ্বংসযজ্ঞে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন প্রদানকারীরাও অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইহুদী ধর্ম সম্প্রদায়কি হত্যাকারী জার্মানদের বিচারের সময় কেবলমাত্র ধ্বংসযজ্ঞের সাথে সরাসরি জড়িতদেরই বিচার হয়নি, বরং নাজী গণহত্যাযজ্ঞের প্রতি নৈতিক সমর্থন দানকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচাররর ক্ষেত্রে বিশেষ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। যেহেতু ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সময় সংঘঠিত প্রতিটি অপরাধ স্বতন্ত্র হতে বাধ্য সে জন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া স্বভাবিক কারণেই সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদানের জন্য ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যের সাথে অভিযুক্তের অপরাধ সংঘঠনকারী সংস্থার সাথে যুক্ত থাকা এবং অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার সময় অকুস্থলে বা কাছাকাছি উপস্থিত থাকার বিষয়টি সমান গুরুত্ব লাভ করে। হিটলারের সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী নাজী পার্টির সমস্ত সদস্যকে শুধুমাত্র ওই পার্টির সদস্য হওয়ার কারণেই শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী এ দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় সমগ্র বাংলাদেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, যে কোন বিচারেই তা ছিল একটি নজীরবিহীন গণহত্যা।
যদিও গণহত্যার মত অপরাধ মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই সংঘটিত হয়েছে, তবু গণহত্যার আন্তজাতিক ভাবে প্রয়োগ যোগ্য সংজ্ঞা প্রদান এবং গণহত্যা যেহেতু সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, সেহেতু গণহত্যার অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদান আন্তর্জাতিক বিবেচনার ব্যাপার- এই বিশ্বজনীন সাধারন নীতির প্রচলন করা হয় মূলতঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মানীর পরাজয়ের পর ১৯৪৫ সালের ৩১ মে রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিস হলে যুদ্ধাপরাধ কমিশনের সদস্য রাষ্ট্রগুলির এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যার লর্ড রাইট বলেন:
"... ... নাজী অথবা ফ্যাসিবাদী অপরাধের বৈশিষ্ট্য হল যে, সমগ্র যুদ্ধ এলাকার ও অধিকৃত এলাকায় তারা যে শুধু ব্যাপক ভাবে অপরাধই করেছে তাই নয়, তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে, এর পেছনে ছিল ব্যাপক একটা পরিকল্পনা; এসব এসেছে একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের মস্তিষ্ক থেকে এবং এসব পরিকল্পনা কার্যকর হয়েছে, বিস্তৃত হয়েছে, সুসংগঠিত প্রতিনিধি ও কৌশলের মাধ্যমে; এর অর্থ প্রত্যেকে কাজ করেছে একটি নির্দেশে, একটি সূত্রে।"
ওই বছর ৮ আগষ্ট, নেতৃস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচরের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালের কার্যপ্রণালী বিধিতে ছিল মোট ৩০ টি অনুচ্ছেদ।
ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল যে, ইউরোপীয় অক্ষশক্তির দেশগুলোর প্রয়োজনে যে ব্যক্তিগতভাবে অথবা কোন প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসাবে কাজ করেছে এবং নিম্নে লিখিত অপরাধগুলো করেছে তার বিচার ও শাস্তি দেয়ার অধিকার এই ট্রাইব্যুনারের থাকবে :
(ক) শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ- যথা, যুদ্ধ সূচনা বা প্রস্তুতি পরিকল্পনা অর্থাৎ আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন অথবা উল্লিখিত সে কোনটা করার জন্য সাধারণ পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ অথবা ষড়যন্ত্র করা।
(খ) যুদ্ধাপরাধ- যথা, যুদ্ধের আইন অথবা প্রথা ভঙ্গ করা। এতে যুক্ত হবে, কিন্তু এর মধ্যেই সীমিত নয়, অধিকৃত এলাকায় বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা, দুর্ব্যবহার অথবা ক্রীতদাসের মত শ্রমে বা অন্যকাজে নিয়োগ করা, যুদ্ধবন্দীদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা অথবা নাবিকদের প্র্রতি অত্যাচার অথবা সামরিক প্রয়োজনের দ্বরা সমর্থিত নয় এমন সরকারী ও বেসরকারী সম্পত্তি বিনষ্টকরন ও ইচ্ছাকৃতভাবে শহর, নগর ও গ্রামের ধ্বংস সাধন।
(গ) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ - যথা, যুদ্ধের সময় বা আগে কোন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা, বিলুপ্ত করা, ক্রীতদাস করা বা অন্যান্য অমানবিক কাজ ; অথবা রাজনৈতিক, গোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় কারনে বিচার।
উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে নাজী যুদ্ধাপরাধীদের ইতিহাসখ্যাত ন্যুরেমবার্গ বিচার শুরু হয় ১৯৪৫ সালের নভেম্বর মাসে। ১ অক্টোবর ১৯৪৬ পর্যন্ত এই বিচার কাজ চালিয়ে মাত্র ১১ মাস সময়ে মূল যুদ্ধপরাধীদের বিচারের কাজ শেষ করা হয়। অপরাধীদের শাস্তি অবিলম্বে কার্যকর করা হয়।
এই বিচারের পর ট্রাইব্যুনালের নীতিমালা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচিত হয় এবং ভবিষ্যতের রক্ষাকবচ হিসেবে ন্যুরেমবার্গ বিচারকে আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে গ্রহণের বিষয়টি বিবেচিত হয়। তদনুযায়ী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৫৫ তম সভায় ১১ ডিসেম্বর, ১৯৪৬ তারিখের ৯১ (১) সংখ্যক নিম্নলিখিত প্রস্তাবটি সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়ঃ
’হত্যা যেমন ব্যক্তিগত অস্তিত্ত্ব রক্ষার অধিকার লংঘন করে তেমনি গণহত্যাও একটি মানব গোষ্ঠীর বাঁচার অধিকার লংঘন করে। এ ধরনের অধিকার লংঘন মানব চেতনাকে আহত করে, এর ফলে মানব সমাজ ঐ মানব গোষ্ঠীর কৃষ্টি বা ঐজাতীয় অন্যান্য অবদান থেকে বঞ্চিত হয় এবং তা জাতিসংঘের লক্ষ্য ও মূলনীতি এবং নৈতিক আইনের পরিপন্থী।
এ ধরনের বহু গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে যখন গোত্রগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে অংশত বা পূর্নতঃ ধ্বংস করা হয়েছে।
গণহত্যার শাস্তি প্রদান একটি আন্তর্জাতিক বিবেচনার ব্যাপার।
একই সভায় পরিষদ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক সামাজিক কাউন্সিলকে একটি খসড়া আইন প্রণয়নের অনুরোধ জানায়। তদনুযায়ী ষষ্ঠ কমিটি খসড়া প্রণয়ন করে এবং ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদে এ’টি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পাদত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হিসেবে গৃহীত হয়।
চুক্তির মূল বক্তব্য :
চুক্তিবদ্ধ দলগুলো ১১ ডিসেম্বর ১৯৪৬, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৯১ (১) প্রস্তাবে ঘোষণা করে - 'গণহত্যা আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ, জাতিসংঘের লক্ষ্য ও মূল নীতির পরিপন্থী এবং সভ্য জগৎ এটাকে নিন্দা করছে ও মনে করছে:
ইতিহাসের সব পর্যায়ে গণহত্যা মানব সমাজে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। তারা আরো মনে করে, মানুষকে এ ধরনের জঘন্য যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। নিম্নে যা লেখা হলো তাতে তারা স্বাক্ষর দান করছে-
ধারা- ১। চুক্তিবদ্ধ দলগুলো সত্য বলে স্বীকার করে যে, গণহত্যা শাস্তি অথবা যুদ্ধ যে কোন সময় সংঘটিত হোক না কেন, আন্তর্জাতিক আইনে তা অপরাধ, যা রোধ ও শাস্তি দানের প্রতিশ্রুতি তারা দিচ্ছে।
ধারা- ২। বর্তমান চুক্তিতে গণহত্যার অর্থ নিম্নলিখিত যে কোন কাজগুলো, অংশত বা পূর্ণতঃ, কোন জাতীয়, গোত্রহত, গোষ্ঠীগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘঠিত হওয়া। যেমন:
ক। দলের সদস্যকে হত্যা করা,
খ। দলের সদস্যদের দেহ অধবা মানসিক দিক থেকে গুরুতর ক্ষতি করা,
গ। ইচ্ছাকৃতভাবে অংশতঃ বা পূর্ণতঃ দৈহিক ধ্বংস সাধনের পরিপল্পনায় দলীয় জীবনে আঘাত হানা,
ঘ। দলের জন্মরোধ করার উদ্দেশ্যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ,
ঙ। বল প্রয়োগে এক দলের শিশুকে অন্য দলে সরানো।
ধারা- ৩: নিম্নলিখিত কাজগুলো শাস্তির যোগ্য
ক। গণহত্যা;
খ। গণহত্যা করার ষড়যন্ত্র;
গ। গণহত্যা করার জন্য প্রত্যক্ষ ও গণ উত্তেজনা সৃষ্টি,
ঘ। গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা।

ধারা- ৪ : যে সব ব্যক্তি গণহত্যা করবে বা ৩ নম্বর ধারায় বর্ণিত কাজগুলোর যে কোনটি করবে, সে শাসনতান্ত্রিক মতে শাসক, সরকারী কর্মচারী বা ব্যক্তি যেই হোক না কেন, তাকে শাস্তি পেতে হবে।
ধারা- ৫ : চুক্তিতে স্বাক্ষর দানকারী দলগুলো এই আশ্বাস দিচ্ছে সে, তাদের স্ব-স্ব শাসনতন্ত্র অনুযায়ী এই চুক্তিকে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন তৈরী করবে, বিশেষতঃ, যে সব ব্যক্তি গণহত্যার অপরাধে অপরাধী বা তৃতীয় ধারায় বর্ণিত কাজগুলোর যে কোন একটা করার জন্য দোষী বলে বিবেচিত হবে, তাদের শাস্তিদানের ব্যবস্থা করবে।’
গণহত্যার উপরোক্ত বিশ্বজনীন সংজ্ঞার আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে নজীর বিহীন হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে তার সাথে জড়িত প্রত্যেকটি পাকিস্তানী সেনা এবং তাদের এদেশীয় দোসর শাস্তি কমিটির সদস্য, রাজাকার, আলবদর, আলশামস সকলেই গণহত্যার অপরাধে অপরাধী।

বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ কেবলমাত্র স্বধীকারের দাবীতে পরিচালেত একটি ব্যাপক গণ আন্দোলনকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত আকষ্মিক শক্তি প্রয়োগ নয়, বরং তা ছিল বাঙারী জাতির নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ বিনষ্ট করার এক সুদুর প্রসারী পরিকল্পনার অংশ বিশেষ। ঠিক যেভাবে হিটলারের নাজী বাহিনী চেয়েছিল ইউরোপকে ইহুদীমুক্ত করতে এবং তাদের ভাষায় ইউরোপের ’নিম্নশ্রেণীর জাতিগুলোকে সেমিটিক রক্তে পরিশোধিত করতে, ’ তেমনি পাকিস্তানী বাহিনীরও উদ্দেশ্য ছিল- এদেশে বাঙালী জাতিসত্ত্বার চিন্তা চেতনাকে সমূলে উৎপাটন করে এই জনগোষ্ঠীকে তাদের অধীনস্থ দাস জাতিতে পরিণত করা।
১৯৭১ এর গণহত্যার সময় পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালদের ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনার জন্য প্রণীত পরিকল্পনার প্রকৃতি এবং সে সময় প্রদত্ত তাদের বিভিন্ন বিশিষ্ট বক্তব্য বিশ্লেষণী দৃষ্টি দিয়ে দেখলে এ’বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। এবিষয়ে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সূচিন্তিত, মতামত প্রণিধানযোগ্য। এখানে শুধু উদ্ধৃত করা হবে খোদ পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিকের বক্তব্য।
’৭১ - এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পাক বাহিনীর শোচনীয় পরাজয়ের পর পরই ১৯৭২ সালের শুরুতে পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে সেদেশে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করা হয়। ’ডিবেক্যাল কমিশন’ বা ’বিপর্যয় কমিশন’ নামে পরিচিত ওই কমিশনে সাক্ষ্য দানকারীদের অন্যতম ছিলেন পাকিস্তান তাহরিক-ই-ইশতিকলাল পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মালিক গোলাম জিলানী। তাঁর লিখিত স্বাক্ষ্যে তিনি বলেন, ’... ... বাস্তবিক পক্ষে, আমার প্রাপ্ত তথ্য ও বিশ্বাস অনুসারে (আমি বলতে পারি), যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অ্যাকশন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় – এবং এই সিদ্ধান্ত সাধারণভাবে সবাই যে রকম জানে বা বিশ্বাস করে থাকে, তার চেয়ে অনেক আগেই নেওয়া হয়েছিল- সেই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ছিল, যেভাবে কুখ্যাত আইখম্যান পরিকল্পনায় হিটলার ইহুদী জাতিকে নির্মূল করে ইহুদী সমস্যার চ’ড়ান্ত সমাধান করতে চেয়েছিল, সেই একই কায়দায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র জনসমষ্টিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা। এটি ছিল বিকৃত মস্তিষ্কজাত, চরম পৈশাচিক এক ষড়যন্ত্র, যা পাকিস্তানের জন্য লজ্জা ও কলঙ্কের কারণ হতো, এবং এটা তা’ই বয়ে নিয়ে এসেছে।’(দৈনিক মর্নিং নিউজ ২৮ নভেম্বর ’৭৩) বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ যে নাজী জার্মানীর ইহুদী হত্যালীলার চেয়েও ভয়াবহ ছিল সে বিষয়ে মালিক জিলানী তাঁর সাক্ষ্যের অপর একটি অংশে বলেন, ...... বস্তুতঃ আমি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ’হামলা’ করার জন্য ভারতের সমালোচনা তো করবই- না, বরং পাকিস্তানের নামকে এর রাজস্বসহ একচেটিয়া দখল করে নেওয়া মাতাল গুন্ডাদের একটি দলকে পদানত করার কাজে সাফল্যের জন্য আমি মিসেস ইন্তিরা গান্ধীকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমি ভারতের প্রধান মন্ত্রী হতাম, তাহলে আমি অনেক আগেই পদক্ষেপ নিতাম যাতে করে যে তিরিশ লক্ষ বাঙালীকে হিটলারের ইহুদী নিধনযজ্ঞের সময় থেকে সর্বঅধিক নৃশংসভাবে, ঘৃণাতম অপরাধীর মত, সর্বাধিক স্যাডিস্টিকভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের অন্ততঃ কয়েকজনকে বাঁচানো যেত। সরকার এবং এ সমস্ত নৃশংস ঘটনাবলীর জন্য যারা দায়ী সেই সামরিক বাহিনীরই বহু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কাছে ধর্ষণ বেং সম্ভ্রম লুন্ঠনের যে সমস্ত কাহিনী আমি শুনেছি, এবং এ’গুলিকে আমি আন্তরিকভাবে সত্য বলেই বিশ্বাস করি - সেগুলি এমনই নিষ্ঠুর যে নাজীরাও তাদের অধিকৃত এলাকার ধ্বংসযজ্ঞে কখনও তেমন নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেনি।’২। (দৈনিক মর্নিং নিউজ ২৮ নভেম্বর ’৭৩ )
সদ্য যুদ্ধে পরাস্ত, দেশের একটি অংশ হারিয়ে বিপর্যস্ত কোন জাতি, যা কিনা পরাজিত সেনা বাহিনীর দ্বারাই শাসিত হচ্ছে, তাদের সামনে ওই দেশেরই একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকের এই বক্তব্যই সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করে যে, বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা ছিল বাঙালী জাতিসত্ত্বাকে সমূলে উৎপাটন করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত এক ভয়াবহ ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।
যদিও মানবতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত গণহত্যার অপরাধসমূহের আপেক্ষিক গুরুদ্ব নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার, তবু বাস্তব ঘটনার নিরিখে একথা বললে অত্যুক্তি হবেনা যে, বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ছিল সাম্প্রতিককালে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে সংঘটিত
গলহত্যা সমূহ যেমন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা, ভিয়েতনামে সংঘটিত গণহত্যা ইত্যাদির চেয়েও আরও বেশী হৃদয় বিদারক এবং ধ্বংসাত্মক। পূর্ববর্তী গণহত্যাযজ্ঞর ঘটনা সমূহে একটি দেশের সমগ্র শিক্ষিত শ্রেণীকে পরিকল্পিতভাবে নির্মূল করে দেওয়ার চক্রান্ত সংঘটিত হয়েছিল বলে জানা যায় না, যা হয়েছিলা আমাদের দেশে। বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার পর অভিযানে ’জেনোসাইড’ শব্দটির সাথে যুক্ত হয়েছিল নতুন একটি শব্দ, ’এলিটোসাইড’। মৃত মানুষের শরীর থেকে মাংস-অস্থি খুলে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে হাড়ের স্তুপ সাজানোর মত বর্ণনাতীত নৃশংসতা অন্য কোন দেশে প্রদর্শিত হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আলবদর বাহিনী গেস্টাপো বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশী নৃশংসতা প্রদর্শন করেছে। শান্তি কমিটির সদস্যরা নিঃসন্দে হে নাজি পার্টির সদস্যদের কৃত অপরাধের তুল্য অপরাধই করেছে।
গণহত্যার অপরাধের বিচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিবেচনার বিষয় হওয়া সত্বেও এবং এই বিচারের সপক্ষে জাতিসংঘ, বিশ্ব শান্তি পরিষদ, এ্যামনেস্চি ইন্টারন্যাশনাল, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ইত্যঅদি মানবাধিকার সংগঠন সমূহসহ সারা বিশ্বের জনমত সোচ্চার হলেও এদেশে যুদ্ধাপরাধী পাক সেনাদের বিচার হয়নি এবং তাদের সহায়তাকারী দালালদের বিচারের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, অপরাধের প্রকৃতি ও গুরুত্বের বিচারে তা ছিল দুঃখজনক ভাবে অপ্রতুল।
গণহত্যার মতো অপরধের ক্ষমা হয় না কিংবা দেষীদের বিচারের সময়য়ও পেরিয়ে যায় না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আজও বিচার করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের বাস্তব অবস্থার নিরিখে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী এবং এদেশীয় দালালদের যথাযথ বিচার করা বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে হয়ত অত্যন্ত জটিল ও দুরুহ কাজ হবে কিন্তু জাতীয় ইতিহাসে পাকবাহিনীর দালালদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে রাখার কাজটি মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক ইতিহাস রচনারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়া দালালদের চিহ্নিত করে এদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া স্তব্ধ করাও আমাদের দায়িত্ব।
মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের বিরোধিতা করেছে এবং পক্ষান্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তালিকা প্রস্তুত করার দাবী জানিয়ে এসেছে। আমাদের বিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধই একাত্তরের অপ্রকাশিত ইতিহাস সংকলন করে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন খন্ডে প্রকাশ করার প্রেরণা যুগিয়েছে। আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।

No comments:

Post a Comment

thanks for your important comments